এনাল ফিস্টুলা এক প্রকার পায়ুপথের রোগ। খাবার পেটে গিয়ে হজম হওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ পায়খানা হিসেবে আমাদের মলাশয়ে জমা হতে থাকে। মলাশয় ভরে গেলে পায়খানার চাপ তৈরি হয় এবং মলত্যাগের সময়ে পায়ুপথের মাধ্যমে পায়খানা মলদ্বার দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে আসে।
মলদ্বারের আশেপাশের চামড়ায় কখনো কখনো জীবাণুর আক্রমণে ইনফেকশন বা ফোঁড়া হতে পারে। অনেক সময় এসব ফোঁড়া থেকে পুঁজ বের হয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা পায়ুপথের সাথে একধরণের রাস্তা তৈরি করে। ফোঁড়া বা অন্য কোনো কারণে মলদ্বার ছাড়া পায়ুপথের সাথে এই ধরণের অস্বাভাবিক রাস্তা তৈরি হলে সেটিকে এনাল ফিস্টুলা বা মলদ্বারের ফিস্টুলা বলে। অনেকের কাছে এটি ভগন্দর নামেও পরিচিত।
এধরণের ফিস্টুলা বা ভগন্দর হলে মলদ্বারের আশেপাশে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সহ নানান রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ফিস্টুলাগুলো সাধারণত চিকিৎসা ছাড়া নিজে থেকে ভালো হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিস্টুলা সারাতে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়।
এনাল ফিস্টুলার লক্ষণ
মলদ্বারের ফিস্টুলা বা ভগন্দর হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—
- মলদ্বারের আশেপাশের চামড়ায় জ্বালা পোড়া বা চুলকানি হওয়া
- মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা হওয়া। সাধারণত সারাক্ষণ একটি টনটনে ব্যথা থাকে যা বসলে, হাঁটাচলা করলে, কাশি দিলে বা পায়খানা করার সময়ে আরও বেড়ে যায়
- মলদ্বারের আশেপাশের জায়গা থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হওয়া
- মলদ্বারের আশেপাশের জায়গাটি ফুলে লাল হয়ে যাওয়া। সাথে ফোঁড়া থাকলে জ্বরও আসতে পারে
- পায়খানার সাথে রক্ত ও পুঁজ বেরিয়ে আসা
- কিছু ক্ষেত্রে পায়খানার উপর নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে। অর্থাৎ, পায়খানার চাপ আসলে রোগী তা আর চেপে রাখতে পারে না অথবা পায়খানার চাপ এসেছে তা বুঝার আগেই পায়খানা হয়ে যেতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে মলদ্বারের আশেপাশের চামড়ায় ছিদ্রের মত ফিস্টুলার রাস্তাটি বাহির থেকে দেখা যেতে পারে। তবে সাধারণত রোগীর নিজের পক্ষে এটি দেখা কষ্টকর।
এনাল ফিস্টুলা হওয়ার কারণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মলদ্বারের আশেপাশের ফোঁড়া থেকে ফিস্টুলা তৈরি হয়। সাধারণত পুঁজ বের হয়ে যাওয়ার পরে ফোঁড়াটি ঠিকমতো না শুকালে এমনটা হয়।
এছাড়া আরও কিছু কারণে এনাল ফিস্টুলা হতে পারে। যেমন—
১. টিবি (যক্ষ্মা) / এইচআইভি (এইডস): এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
২. মলদ্বারের অপারেশন: পায়খানার ছিদ্রপথের আশেপাশে কোনো অপারেশন হয়ে থাকলে এরপর সেখান থেকে নতুন রাস্তা তৈরি হয়ে এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে৷
৩. ক্রন’স ডিজিজ: এটি একধরনের অসুখ যেখানে পরিপাক নালীতে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। এতে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা হওয়া কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া সহ নানান লক্ষণ দেখা দেয়।
৪. ডাইভারটিকুলাইটিস: এই অসুখটি হলে পরিপাক নালীর শেষ অংশ (বৃহদান্ত্রের) গায়ে কিছু অংশ ফুলে থলির মত হয়ে যায় ও সেখানে ইনফেকশন হয়।
৫. হাইড্রাডেনাইটিস সাপুরাটিভা: এটি এক ধরনের অসুখ যেখানে শরীরের যে অংশগুলোতে ঘাম বেশি হয় সেখানের চামড়ায় ফোঁড়া হয় এবং চামড়া মোটা হয়ে দাগের মত হয়ে যায়।
এনাল ফিস্টুলা হলে করণীয়
এনাল ফিস্টুলার লক্ষণগুলো অনেকদিন ধরে থাকলে দেরি না করে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার লক্ষণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইবেন। এছাড়া নাড়িভুঁড়ি বা পেটে অন্য কোনো ধরণের সমস্যা আছে কি না তাও জানতে চাইবেন।
এ সময় ডাক্তার প্রয়োজনে মলদ্বারের আশেপাশের জায়গাটি পরীক্ষা করে দেখবেন। ফিস্টুলার অবস্থা বুঝার জন্য প্রয়োজনে মলদ্বার দিয়ে আলতোভাবে এক আঙুল প্রবেশ করিয়েও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এই পদ্ধতিকে ডিআরই (ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন) বলা হয়।
এই রোগের ক্ষেত্রে যে পরীক্ষাগুলো করা হতে পারে সেগুলো হলো—
- পুনরায় ডিআরই বা পায়ুপথে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে
- প্রোক্টোস্কোপি করা হতে পারে—যেখানে মলদ্বার দিয়ে একটি নলের মত বিশেষ যন্ত্র ঢুকানো হয়। এটির সাহায্যে ফিস্টুলার রাস্তা আছে কি না তা ভালোভাবে দেখা যায়
- এছাড়া আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান, এমআরআই অথবা সিটি স্ক্যান ইত্যাদি পরীক্ষাও করা হতে পারে
এনাল ফিস্টুলার চিকিৎসা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনাল ফিস্টুলার চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন করা হয়। খুব গুরুতর না হলে অপারেশন করা মোটেই ঠিক নয়।
অপারেশনের পর সাধারণত যেসব অসুবিধা দেখা দিতে পারে
এনাল ফিস্টুলার অপারেশনের পর সাধারণত যেসব অসুবিধা দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো—
- ইনফেকশন: সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। তবে অনেক বেশি ইনফেকশন হলে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অথবা পুনরায় অপরেশন করা লাগতে পারে।
- পুনরায় ফিস্টুলা ফিরে আসা: অপারেশন করে অপসারনে পরও অনেক সময় একই জায়গায় আবার ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
- পায়খানার চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা: ফিস্টুলার সবধরনের চিকিৎসাতেই এই অসুবিধাটি দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত এতে খুব বেশি সমস্যা হয় না এবং এটি নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
এ সমস্যাগুলো কতটা জটিল হতে পারে তা সাধারণত ফিস্টুলাটি কোথায় হয়েছে এবং কোন পদ্ধতিতে এটির চিকিৎসা করা হচ্ছে সেটির উপর নির্ভর করে। তাই আমার রিকোয়েস্ট থাকবে প্রথম স্টেজেই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিলে পরিপূর্ণ সুস্থ হবে।
আমাদের চিকিৎসার ফলোআপ:

0 comments:
Post a Comment